লক্ষ্য, পরিকল্পনা, উদ্দেশ্য ও সাফল্য- এগুলো কেবলমাত্র শব্দ নয় । এগুলো একে অপরের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত এক একটি সিঁড়ি যা আপনাকে নিয়ে যাবে সফলতার শীর্ষে । আপনি দৌড়ে যাচ্ছেন,সাফল্যকে ছুঁতে চাচ্ছেন, তার মানে কিন্তু আপনি আপনার কমফোর্ট জোন এর বাইরে পা রেখেছেন। লড়ছেন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। আর ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ইংরেজীতে একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে, – “ If you are not growing, you are dying.” অর্থাৎ আপনি যদি না বাড়েন (ব্যবসায় না বাড়ান) আপনি মারা যাচ্ছেন। বিশ্ব আলোর বেগে পরিবর্তিত হচ্ছে, আপনি এখানে যদি এক বিন্দু অপেক্ষায় থাকেন,স্থীর থাকেন তাহলে আপনার প্রতিযোগী আপনাকে ছাড়িয়ে যাবে। আর এটাই সত্য।
আপনারা জানেন কোন কোম্পানি সবচেয়ে বেশী খরচ করে তার রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্টের পিছনে, কারন কোম্পানির সাফল্য অনেকাংশেই নির্ভর করে অনবরত উদ্ভাবনের উপর। যদি আপনি নতুন কিছু নাই আনতে পারেন তবে প্রতিযোগী ও ছোট ছোট কোম্পানি গুলো আপনার মার্কেট শেয়ার খেয়ে ফেলবে। তবে একজন নতুন উদ্যেক্তার জন্য প্রতি মুহূর্তে নতুন কোন উদ্ভাবন নিয়ে আসা আসলেই কঠিন ব্যাপার। প্রত্যেক উদ্যেক্তা মার্কেটে নতুন কিছু উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রবেশ করে, সৃষ্টি করে কর্মসংস্থান, সমাজে রাখে আর্থিক অবদান। আমাদের দায়িত্বের মাঝে পড়ে আমরা যেন আমাদের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা করি একজন উদ্যেক্তা কে এগিয়ে যেতে, তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে,তাদের স্বপক্ষে কাজ করে, আমাদেরকমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে ।
চলুন আপনাদের নিয়ে যাই আদর্শ উদ্যেক্তার পৃথিবীতে । জেনে নিন ৫টি অসাধারন টিপস একজন সফল উদ্যেক্তা হবার।
১। সবসময় ভাবুন অন্যদের চেয়ে খানিকটা ভিন্ন আঙ্গিকেঃ
পরামর্শ তা যেমনই হোক না কেন তা অবশ্যই মূল্যবান। তবে আপনার প্রতিটি সিদ্ধান্তই যদি কোন না কোন পরামর্শ দাতার পরামর্শে গৃহীত হয় তবে আপনার সিদ্ধান্তে তাদের প্রভাব বজায় থাকবে। কে বলতে পারে যে কাল সে পরামর্শ দাতা আপনার কষ্টার্জিত সাফল্যের ক্রেডিট নিবে না। তাই শুনবেন সবার কথা,মানবেন নিজের মনের কথা। ব্যবসায়িক সাফল্য ও প্রফেসনাল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে যখন ওয়াটপ্যাড এর প্রতিষ্ঠাতা অ্যালেন লাও এর কাছে জানতে চাওয়া হয় তখন তিনি তার Peer Group এর কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন তিনি তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের সিইওদের নিয়ে প্রতি ২ মাসে ৩ ঘন্টার জন্য দরজা বন্ধ করে মিটিং এ বসেন… সবার মোবাইল ঐ সময় বন্ধ করে দেওয়া হয় …খোলামেলা পরিবেশে সবাই সেখানে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করে ও কর্মপদ্ধতি ঠিক করে। তাদের সম্মিলিত ধারনাকে কাজে লাগিয়েই ওয়াটপ্যাড প্রতিষ্ঠাতা অ্যালেন লাও সুষ্ঠু সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়ে থাকেন। আপনি সফল হতে চাইলে এভাবেই নিয়মিত সিডিউলড মিটিং করতে হবে সর্বস্তরের কর্মীদের নিয়ে। আপনি চাইলে দুই একজন সহকর্মীকে নিয়ে ইনফরমাল মিটিং ও করতে পারেন চলার পথে অথবা কোন এক দুপুরের খাবারে বা বিকেলের নাস্তায়।কথা হতে পারে নিছক মতামত, ফিলোসফি বা অভিজ্ঞতা কেন্দ্রিক। যদি দেখতে পান আপনার সহকর্মী শুধু আপনার কথার সুরে সুর মিলাচ্ছে তবে আপনি ভুল লোককে বেছে নিয়েছেন।
২। বেশি বেশি বই ও আর্টিকেল পড়ুনঃ
নতুন যে কোন উদ্যেক্তার প্রথম শিক্ষক প্রথম সফর সঙ্গী শুধুমাত্র বই। বইয়ের পাতায় কি- ব্লগে, কি আরেকজনের অভিজ্ঞতায় আপনি খুঁজে পাবেন একই সাথে রোমাঞ্চ ও জ্ঞান। বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে হাজারো উৎসাহ মুলক লেখা আপনি চাইলেই সহজেই খুঁজে পাবেন। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে বিশ্বের ৮৮% শতাংশ ধনী ব্যক্তি প্রতিদিনের অন্তত ৩০ মিনিট কাজে লাগায় বই ও আর্টিকেল পড়ায়। বিশ্বের শুধুমাত্র ২% সাধারন মানুষ এভাবে প্রতিদিন বই পড়ে।
পড়ুন ও পুনরায় পড়ুন প্রতিটি বই, ব্লগ পোষ্ট, আর্টিকেল নতুন আইডিয়া, স্কীল সম্পর্কে ধারনা নিন। এমন হতেই পারে অনেক কন্সেপ্ট হয়তো আপনার বিজনেস রিলেটেড নয়, তবু কে বলতে পারে ভবিষ্যতে চলার পথে তা আপনার কাজে আসবে। আপনার ধারনার সাথে,লজিকের সাথে খাপ খায় এমন বক্তাদের লেখার নোট নিন ও ফলো আপে রাখুন।আপ্নি নিজেই বুঝে যাবেন কোন বই আপনার আত্ম তথা সামগ্রিক উন্নয়নে প্রেরনা হিসেবে কাজ করছে।
৩। করুন SWOT অ্যানালিসিসঃ
বিজনেস স্কুল গ্র্যাজুয়েট ও মার্কেটারদের মাঝে খুব জনপ্রিয় ও ব্যবহৃত একটি টার্ম হচ্ছে SWOT ( Strength, Weaknesses, Opportunity,Threat) Analysis. সোওট অ্যানালিসিস আপনাকে জানাবে আপনার সবচেয়ে শক্তিশালী সত্ত্বা, আপনারসবচেয়ে দুর্বল মুহূর্ত, আপনার সামনের অপরিসীম সুযোগ ও আপনার সামনের দুর্গম বাধা সম্পর্কে। একজন নেতৃত্ব সম্বলিত মানুষ ও আগামী দিনের উদ্যেক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হলে আগে তো নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবে জানতে হবে। বিশ্বাস করুন সাফল্যের পূর্ব শর্তই হচ্ছে নিজের প্রতি সত্য থাকা। আপনি যদি নিজের কাছে সত্য ও সৎ থাকেন তাহলেই হতে পারবেন সফল উদ্যেক্তা। তাই আজই করে ফেলুন নিজের সোওট অ্যানালিসিস।
৪। বেড়ে উঠার আইনঃ
ল অফ গ্রোথ বা বেড়ে উঠার আইন একটি জনপ্রিয় কনসেপ্ট। বলা হয়ে থাকে যে আপনার মন হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। আপনার মন ও চিন্তা শক্তি কে কাজে লাগিয়ে আপনি কিভাবে আপনার ভবিষ্যৎ কে আকার দিচ্ছেন তার উপর নির্ভর করছে আপনার সাফল্য। এই প্রসঙ্গে এমেট ফক্স বলেন,” আপনি যা ভাবছেন ঠিক সেভাবেই আপনি বেড়ে উঠছেন। আপনি যতই আপনার উপর করা অতীতের অবিচার নিয়ে ভাবতে থাকবেন ততই নিজের উপর দুঃখ ডেকে আনবেন। আপনার প্রাপ্য আপনি আদায় করুন পরিশ্রমের মাধ্যমে। ভালো ভাবুন, ভালো আশা করুন, বিশ্বাস করুন আপনি ভালোটাই পাবেন। একেই বলে পাওয়ার অফ পজিটিভিটি।
৫। নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিরতি নিনঃ
আপনি নতুন ব্যবসায় শুরু করেছেন তার মানে ব্যবসায় আপনার জন্য ঠিক যেন ম্যারাথন দৌড় । আপনি যদি বিরতিহীন না দৌড়ে কিছু মুহূর্তের জন্য থামেন তবে আপনার প্রতিযোগী এগিয়ে যাবে। তাই বলে আপনি যদি আপনার মনকে খানিকটা বিশ্রাম না দেন তবে ক্লান্তি আপনায় ঘিরে ধরবে । আপনার উদ্যম হারিয়ে ফেলবেন,চাইলেও আপনার মাথায় নতুন কোন আইডিয়া খেলবে না । সর্বোপরি দিনের শেষে আপনার মনে আফসোস কাজ করবে যে ব্যস্ততার ভীড়ে আপনার জীবনের খুশীর মুহূর্ত গুলো বুঝি হারিয়েই ফেললেন। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজের মনকে পূর্ণ বিশ্রাম দিন। ঘুরে আসুন সমুদ্র তীর থেকে পাহাড়ের বুক থেকে। দেখবেন আপনার কাজের উদ্যমের সাথে সাথে বাড়ছে আপনার বিজনেস আসছে নিত্যনতুন আইডিয়া। আর কি চাই একজন সফল উদ্যেক্তা হতে!!!